Search This Blog

Tuesday, November 5, 2019

সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামীন, বাহরুল উলূম, ফক্বীহাতুন নিসা, রাহনুমায়ে দ্বীন, হাদীয়ে যামান, ছহিবাতু ইলমে গইব, কায়িম-মাক্বামে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, মুতহ্হারাহ্, মুতহ্হিরাহ্, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মহামূল্যবান নসিহত মুবারক
৭ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪১

“পারিবারিক জীবনে আহলিয়ার অবদান”


পারিবারিক জীবন শান্তিময় করার জন্য আহাল-আহলিয়া উভয়ের ভূমিকা অপরিসীম। আর শান্তিময় জীবন-যাপন করা তখনই সম্ভব যখন পবিত্র কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী পরিচালিত হবে। একজন আহাল তার সম্মান রক্ষা করতে পারে তার আহলিয়ার দ্বারা এবং একজন আহলিয়াও তার সম্মান রক্ষা করতে পারে তার আহালের দ্বারা। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে উভয়কে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন 
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَاَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
অর্থ মুবারক: তোমরা (পুরুষরা) তাদের (মহিলাদের) আবরণ, তারাও তোমাদের আবরণ। 
অর্থাৎ আহাল ব্যতীত আহলিয়া যেমন পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারেনা, ঠিক তেমনি আহলিয়া ব্যতীত আহালও পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারেনা। 
আমরা যদি সম্মানিত পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সুচনা লগ্ন থেকে আজ অবধি পর্যন্ত লক্ষ্য করি, তাহলে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সহজেই খুঁজে পাই। যেমন: সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার যিনি ধারক-বাহক উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আসলেন, তখন থেকে সম্মানিত হায়াত মুবারকে থাকা পর্যন্ত এমন বেমেছাল খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম মুবারক দিয়েছিলেন যার ফলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি সন্তুষ্ট মুবারক হয়ে সবসময় উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক করতেন এবং বলতেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে যত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম হাদিয়া মুবারক দিয়েছেন; উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মত অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম দেননি।” 
 নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুরুস সালাম (জবান মুবারক) উনার এই ছানা-ছিফত মুবারক দ্বারাই প্রমাণিত হয়, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার শান-মান ফযীলত কত উর্দ্ধে। ঠিক তেমনি অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অবদানও বেমেছাল। মূলত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হায়াত মুবারকে থাকা অবস্থায় হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যেমন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক আঞ্জাম মুবারক দিয়েছেন ঠিক তেমনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পরেও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক আঞ্জাম মুবারক দিয়েছেন। যার কারনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের থেকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সার্বিক বিষয়ের ফায়সালা মুবারক নিয়েছিলেন। (সুব্হানা হযরত উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম) পরবর্তীতে মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ উনাদের দিকে লক্ষ্য করলেও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক আঞ্জামের বিষয়টি দেখতে পাই। হযরত পুরুষ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের কামিয়াবীর পিছনে মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ উনাদের অবদানও ছিল বেমেছাল। যেমন তাবুকের জিহাদের সময় যিনি খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে¡ আকবর আলাইহিস সালাম উনার কাছে তেমন কোন অর্থ মুবারক ছিলো না কারণ একদিকে ফসল কাটার সময় তখনও হয়নি অর্থাৎ ফসল উঠলে তা বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করর কথা ছিল। কিন্তু তখনও ফসল ও ফল উঠার সময় হয়নি। অপরদিকে উনারা যেহেতু সবকিছু মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করে দিতেন, কোনকিছু জমা করে রাখতেন না। যার কারণে তিনি তাবুকের জিহাদের ঘোষনা শুনে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েন। তখন উনার এই চিন্তাগ্রস্ত অবস্থা দেখে উনার সম্মানিতা আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি উনার কাছে চিন্তার কারণ জানতে চাইলেন। জবাবে তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাবুকের জিহাদের ষোষণা দিয়েছেন এবং ইরশাদ মুবারক করেছেন, যার যার সাধ্য সামর্থ অনুযায়ী শরীক থাকার জন্য। কিন্তু আমার হাতে তেমন কিছু নেই, আমি কিভাবে শরীক থাকব। এজন্য আমি ভীষন চিন্তিত। তখন উনার আহলিয়া বললেন, চিন্তার কোন কারণ নেই। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু সাধ্য সামর্থ অনুযায়ী শরীক থাকতে বলেছেন তাই আমাদের যা কিছু আছে, আপনি তা নিয়ে যান। তখন উনার আহলিয়া ঘরের সবকিছু  এমনকি ঝাড়–টা পর্যন্ত একটা বস্তায় ঢুকিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে তুলে দিলেন। এভাবেই উনার সম্মানিত আহলিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার চিন্তা মুবারক দূর করে দিলেন। তাবুকের জিহাদে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সর্বস্ব গোলামীতে আঞ্জাম মুবারক দেওয়ার ফলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি মুবারক প্রকাশ করেন। এখানে একটা সুক্ষ্ম  ফিকিরের বিষয় Ñ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনি যে তাবুকের জিহাদে গোলামীতে আঞ্জাম মুবারক দিয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বোচ্চ রেযামন্দি- সন্তুষ্টি হাসিল করেছিলেন তার পিছনে কার অবদান ছিলো ? কাজেই বিষয়টি সহজেই বুঝা যাচ্ছে, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মাতিা হযরত আহলিয়া  উনার অবদান ছিল। সুবহানাল্লাহ! আসলেই আমরা যদি বিষয়টি আরো লক্ষ্য করি সেই মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে শুরু করে আজ অবধি যারা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আখাছছুল খাছ লক্ষ্যস্থল বান্দা-বান্দী উম্মত ছিলেন এবং আছেন। উনাদের প্রত্যেকেরই সাফল্যের চুড়ান্ত শীর্ষে পৌঁছানোর পিছনে অবদান রেখেছেন Ñ কারো সম্মানিতা মাতা, কারো সম্মানিতা আহলিয়া এবং কারো সম্মানিতা বানাত। যার সর্বোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের মহাসম্মানিতা, মাথার তাজ, নয়নের মণি, প্রাণপ্রিয়া শায়েখ উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম! (সুবহানা উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম)। উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা নারী জাতির পথ প্রদর্শক, আমাদের মাঝে হিদায়েতের কান্ডারি, নাজাতের দিশারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। (সুবাহানা উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম) মূলত, একজন সন্তান তার মাতার মাধ্যেমে সার্বিক পরিচয় লাভ করে থাকে। ঠিক তেমনি উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে আমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পরিচয় মুবারক লাভ করেছি , করছি এবং অনন্তকাল ধরে করতেই থাকব। (ইনশাআত উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম)। অপরদিকে উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার হাক্বীক্বী পরিচয় মুবারক হচ্ছেন তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আল ঊলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হাক্বীক্বী ক্বায়িম-মাক্বাম। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আল ঊলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হাক্বীকী কায়িম-মাক্বাম হিসেবে সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সার্বিক বিষয়ের ব্যাপক খিদমত মুবারক উনার বেমেছাল আঞ্জাম মুবারক দিয়ে যাচ্ছেন। (সুবহানা উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম)। উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম  উনার নছীহত মুবারক থেকে আমরা এই কথাগুলোই বুঝতে পেরেছি যা আমরা লিপিবদ্ধ করেছি। কাজেই হাক্বীক্বী মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করতে হলে এবং পারিবারিক জীবনে শান্তি লাভ করার জন্য সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার আদর্শ মুবারক অনুসরণ অনুকরন করতে হবে।


“পিতা-মাতা উভয়েই দ্বীনদার হওয়া ব্যতীত
দ্বীনদার সন্তান আশা করা সম্পূর্ণ বৃথা”

সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুতহ্হারাহ্, মুতহ্হিরাহ্, হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ مَنْ اَحَقُّ بِـحُسْنِ صَحَابَتِىْ قَالَ اُمُّكَ قَالَ ثُـمَّ مَنْ قَالَ اُمُّكَ قَالَ ثُـمَّ مَنْ قَالَ اُمُّكَ قَالَ ثُـمَّ مَنَ قَالَ اَبُوْكَ. (متفق عليه)
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, একদা একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসলেন এবং বললেন- ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার নিকটাত্মীয়দের মধ্যে সৎ ব্যবহার পাওয়ার সর্বাধিক হক্বদার কে? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার মাতা। তিনি বললেন তারপর কে? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার মাতা। তিনি বললেন, অতঃপর কে? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার মাতা। তিনি বললেন, অতঃপর কে? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- আপনার পিতা। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুতহ্হারাহ্, মুতহ্হিরাহ্, হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় যা বলেছেন তা থেকে আমরা যা বুঝতে পেরেছিÑ তা হলো তিনটি কারণে মায়ের হক্বকে প্রধান্য দেওয়া হয়েছে: ১. সন্তানকে রেহেমে ধারণ করেন ২. সন্তান আগমনের সময় যে কষ্ট ও বেদনা সহ্য করেন ৩. সন্তানকে দু’বছর দুধ পান করান। 
এছাড়া মানুষ দুনিয়াতে মায়ের মাধ্যমেই আসে। মায়ের মাধ্যমেই দুনিয়া চিনতে পারে। এমনকি বাবাকেও চিনতে পারে। অন্যথায় বাবাকে চিনাও মুশকিল। আপরদিকে শিশুকালে যখন সন্তানের কোন বুঝ শক্তি থাকে না তখন সে মাকে দেখে দেখেই সবকিছু শিখে। এজন্য মাকে দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কারণ মা যদি দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত না হন তাহলে সন্তানকেও দ্বীনি শিক্ষা দিতে পারবে না। আর সন্তান যদি শিশুকাল থেকে দ্বীনি শিক্ষা না পায় তাহলে সে বড় হওয়ার পর তাকে দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যেমন- মাটি দিয়ে কেউ যদি কোন বস্তু তৈরী করতে চায় তাহলে মাটি কাঁচা থাকা অবস্থায়ই সেটা দিয়ে তৈসংরী করতে হবে। অন্যথায় মাটি শুকিয়ে গেলে সেটা দিয়ে কোন বস্তু তৈরী করা যাবে না। ঠিক তদ্রুপ সন্তানকেও শিশুকাল থেকেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিষয়গুলি শিক্ষা দিতে হবে। অন্যথায় সন্তানকে আল্লাহওয়ালা বানানো কঠিন হয়ে যাবে। সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া পিতা-মাতা উভয়েরই দায়িত্ব। 
নিম্নে একটি ঘটনা দ্বারা বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে যাবে। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত কালে এক পিতা এসে মামলা দায়ের করল যে, তার (উক্ত পিতা) সন্তান তার কোন হক্ব আদায় করে না। সেই সন্তানকে ডাকা হলো এবং তার বাবার অভিযোগ ঠিক কিনা জানতে চাওয়া হলো। ছেলেটি বলল যে, ঠিক কথা বলেছে তার বাবা। কিন্তু ছেলেটি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার নিকট জানতে চাইলো, একজন সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার কী হক্ব বা দায়িত্ব রয়েছে। তখন তিনি জবাবে বললেনÑ একজন সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার তিনটি হক্ব বা দায়িত্ব রয়েছেÑ ১. একজন দ্বীনদার পরহেযগার মেয়েকে বিয়ে করা ২. সন্তান জন্ম নেওয়ার পর তার একটি সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখা ৩. সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করা। জবাব শুনে ছেলেটি বলল, “হে হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম! আমার বাবা এই তিনটি হক্বের মধ্যে একটি হক্বও আদায় করেনি। প্রথমত: আমার মা একজন বাদী, যিনি দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত নন। দ্বিতীয়ত: আমার নাম হচ্ছে জুল, যার অর্থ গোবরের পোকা। তৃতীয়ত: আমাকে কোন দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া হয়নি।” তখন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এ মামলা খারিজ করে দেয়া হলো। কেননা সন্তানের কোন হক্ব আদায় করা হয়নি। সুতরাং এ ঘটনা দ্বারা বুঝা যায়, বাবা-মা উভয়কেই দ্বীনি ইলম অর্জন করে দ্বীনদার হওয়ার কোশেশ করতে হবে।
অপরদিকে একজন মায়ের যদি দ্বীনের সঠিক বুঝ না থাকে তবে সেই মা তার সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারবে না। তাই বাবার দায়িত্ব হচ্ছে তার আহলিয়াকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সঠিক জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হয় এমন স্থানে নিয়ে গিয়ে সঠিক দ্বীনি বিষয়ে শিক্ষা লাভের ব্যবস্থা করে দিয়ে হাক্বীক্বী আল্লাহওয়ালী বানানো। পক্ষান্তরে শুধুমাত্র মায়ের যদি দ্বীনি জ্ঞান থাকে আর পিতার দ্বীনি জ্ঞান না থাকে এক্ষেত্রে মা যদি সন্তানকে কোন দ্বীনি বিষয়ে আদেশ করেন বা দ্বীনি কথা বলেন এমতাবস্থায় পিতা সেই কথাকে গুরুত্ব না দিলে সন্তানও মায়ের কথা গুরুত্ব দিবে না। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই সন্তান তখন তার বাবার দিকে রুজু হয়ে যাবে। এমন অবস্থায় মা দ্বীনদার হওয়া সত্ত্বেও ঐ সন্তানকে মায়ের পক্ষে দ্বীনদার বানানো কঠিন হয়ে যাবে অর্থাৎ সম্ভব হবে না। আরো উল্লেখ্য যে, সন্তানকে যদি মা শরীয়ত পালনের ব্যাপারে শাসন করেন এবং বাবা যখন বাসায় ফিরে আসেন, সন্তান বাবার কাছে মায়ের উক্ত বিষয়ে অভিযোগ করে তখন দেখা যায় বাবাও সন্তানের পক্ষে কথা বলে। তাই সন্তানের কাছে বাবাকেই তখন ভাল মনে হয়। এভাবে বাবার কাছ থেকে প্রশ্রয় পেয়ে সন্তান এক সময় বেপরোয়া হয়ে যায়। সুতরাং বাবার দায়িত্ব হচ্ছে বিষয়টি দ্বীন ইসলাম উনার আলোকে তাহক্বীক করে ফায়সালা করা। কেননা  প্রবাদ আছে  “সময়ের এক ফোঁড়; অসময়ের দশ ফোঁড়”। সময় থাকতেই অর্থাৎ ছোট বেলা থেকেই সম্মানিত শরীয়ত মুতাবেক যখন যেখানে যা দরকার তথা শাসন করার ব্যাপারে শাসন করা আবার আদর বা কোন আবদার রাখার বিষয়েও বাবা-মা উভয়কেই বিষয়টি ভালো ভাবে বুঝে নিয়ে ফায়সালা করা, তবেই সেই পরিবারে থাকবে জান্নাতের নিয়ামত তথা শান্তি। আর সন্তানও হবে হাক্বীক্বী দ্বীনদার ও আল্লাহওয়ালা। 
অপরদিকে সন্তানকে দ্বীনদার হিসাবে গড়ে তুলতে হলে বাবা-মা উভয়কে কেমন হওয়া উচিত তা জগৎ বিখ্যাত লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ হযরত বড়পীর সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত আব্বা-আম্মাজান উনাদের জীবনী মুবারকের দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায়। মূলত উনারা দ্বীনদার-পরহেযগার, মুত্তাকি ছিলেন বলেই উনাদের হুজরা শরীফে লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ হযরত বড়পীর ছাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাশরীফ  মুবারক নিয়েছেন। এ ঘটনা থেকে বাবা-মা উভয়কেই ইবরত-নছীহত গ্রহণ করতে হবে। 
কাজেই পুরুষ এবং মহিলা উনারা কিভাবে, কার কাছ থেকে দ্বীনি ইলম অর্জন করবে? যেহেতু খাছ করে মহিলাদের জন্য পর্দা করা ফরয কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখতে পাই, হাক্বীক্বী পর্দার সাথে কোথাও দ্বীনি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করার ব্যবস্থা নেই। আবার শুধুমাত্র কিতাবাদি পড়েও হাক্বীক্বী জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। যদি কিতাবাদি পড়েই দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হত, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি যুগে যুগে হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে না পাঠিয়ে সরাসরি কিতাব নাযিল করে দিতেন। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি কিতাব নাযিল করার পাশাপাশি যুগে যুগে হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেও পাঠিয়েছেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে প্রেরণ করার পিছনে কি কারণ রয়েছে, এ সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, 
لَقَدْمَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ بَعْثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِنْ اَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ ايتِه وَ يُزَكِّيْهِمْ وَ يُعَلِّمُهُمُ الْكِتبَ وَ الْـحِكْمَةَ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِىْ ضَللٍ مُّبِيْنٍ
অর্থ মুবারক: “অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি মু’মিনগন উনাদের প্রতি ইহসান মুবারক করেছেন। কারণ মু’মিনগণ উনাদের মাঝে মু’মিনগণ উনাদের জন্য এমন একজন মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করেছেন, যিনি উনাদেরকে উনার (মহান আল্লাহ পাক) মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে শুনাবেন এবং অন্তর পরিশুদ্ধ করবেন ও কিতাব এবং হিকমত শিক্ষা দিবেন যদিও তারা ইতিপূর্বে সঠিক পথপ্রাপ্ত ছিলেন না।” (সূরা আল ইমরান শরীফ- ১৬৪)
যদিও এই মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কিতাবসহ পাঠিয়েছেন মানুষকে হিদায়েত দেওয়ার জন্য, অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য, গোমরাহী থেকে হিদায়েতের দিকে নিয়ে আসার জন্য। উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে সম্মানিত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমনের ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। 
যেহেতু হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমনের ধারা বন্ধ হয়ে গেছে, তাহলে মানুষ এই নিয়ামত গুলো অর্থাৎ দ্বীনি জ্ঞান কার থেকে অর্জন করবে। সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয় হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন,
اَلْعُلَمَاءُ وَرَثَةُ الْاَنْبِيَاءِ
অর্থ মুবারক: হযরত কাছির ইবনে ক্বায়েছ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, “হক্বানী রব্বানী আলিম (যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন এবং গুনাহ্, হারাম-নাজায়িয কাজ থেকে বেঁচে থাকেন) উনারাই হচ্ছেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিছ।” (তিরমীযি শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ)
বর্তমানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আখাচ্ছুল খাছ ওয়ারিছ তথা হক্বানী রব্বানী আলিম হিসেবে তাশরীফ মুবারক এনেছেন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হির, মুত্বহ্হার সাইয়্যিদুনা মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত ছহিবাতুল মুকাররমা, সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুতহ্হারাহ্, মুতহ্হিরাহ্, হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি। (সুবহানা উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম)। তাই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সার্বিক বিষয়ে দ্বীনি জ্ঞান অর্জন এবং আমলে বাস্তবায়ন করে ইস্তেকামত থাকার জন্য খাছ করে পুরুষদের জন্য আবশ্যক মুত্বহ্হির, মুত্বহ্হার সাইয়্যিদুনা মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি আর খাছ করে মহিলাদের জন্য সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুত্বহ্হারাহ্, মুত্বহ্হিরাহ্, উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা। আর এর মাধ্যমেই  দুনিয়া ও আখিরাতের ফায়দা হাছিল করা।

“হাত-পা, চেহারা খোলার মাধ্যমে
অবশ্যই সৌন্দর্য প্রকাশ পায়”

সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুত্বাহ্হারাহ , মুত্বহহিরাহ হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা আহযাব শরীফ উনার ৫৯নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ياَ اَيُّهَا النَّبِىُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ وَ بَنَاتِكَ وَ نِسَاءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَّ  ذَلِكَ اَدْنى اَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ  وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَحِيْمًا 
অর্থ মুবারক: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার মহাসম্মানিত আযওয়াজুম মুতহ্হারাহ অর্থাৎ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, মহাসম্মানিত বানাত আলাইহিন্নাস সালাম এবং মু’মীন উনাদের আহলিয়া উনাদেরকে বলুন, উনারা যেন উনাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে রাখে। এতে উনাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে উনাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” 
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুতহ্হারাহ্, মুতহ্হিরাহ্, হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নসীহত মুবারক থেকে আমরা যা বুঝতে পেরেছি- এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি কিভাবে স্বাধীনা মহিলাদের চেনা যাবে সেই বিষয়টি বলে দিয়েছেন। স্বাধীনা মহিলাদের পর্দার বিধান হলো, তারা তাদের চাদরের কিয়দাংশ মাথা থেকে বক্ষ পর্যন্ত ঝুলিয়ে দিবে অর্থাৎ আপাদামস্তক ঢেকে রাখবে এমনকি একচুল পরিমাণও খোলা রাখা যাবেনা। ফলে তাদরেকে উত্যক্ত করা হবেনা। 
উল্লেখ্য, দাসী-বাদীদের পর্দার বিধান হলো - পুরুষের ন্যায় হাত,পা, চেহারা ব্যতীত সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা। মূলত হাত-পা, চেহারা খোলা রাখার দ্বারাই চেনা যাবে, এরা দাসী-বাদী। এখন যারা দাসী-বাদীদের ন্যায় হাত-পা, চেহারা খোলা রাখে এবং সেজেগুজে বের হয় তাদেরকেই উত্যক্ত করা হয়। ফলে ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হয়। আর যাদের আপাদামস্তক ঢাকা থাকবে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। তারাই সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ,স্বাধীন।
মূলত, মহিলাদের অবস্থানস্থল হচ্ছে ঘর অর্থাৎ তারা ঘরে অবস্থান করবে। যখন বের হওয়ার প্রয়োজন দেখা দিবে তখন কোন প্রকার সৌন্দর্য প্রদর্শন ব্যতীত আপাদামস্তক ঢেকে বের হবে। সৌন্দর্য প্রদর্শন বলতে কি বুঝানো হয়েছে, বিষয়টি ফিকিরের- সৌন্দর্য বলতে একজন মহিলার আপাদামস্তক সবই সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। তবে বিশেষভাবে সেই সৌন্দর্য ফুটে ওঠে হাত-পা, চেহারা খুলে রাখা তথা দেখানোর মাধ্যমে। কেননা একটি মেয়েকে পছন্দ করতে হলে তার হাত-পা, চেহারা দেখে পছন্দ করা হয়। বিষয়টি যদি এরূপই হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে হাত-পা, চেহারা খুলে রাখা জায়েয হতে পারে? মূলত- যারা হাত-পা, চেহারা খুলে রাখা জায়েয বলে তারা কি আদৌ তাদের কথার প্রেক্ষিতে কুরআন শরীফ থেকে একটি আয়াত শরীফ অথবা হাদীছ শরীফ থেকে একটি হাদীছ শরীফ পেশ করতে পারবে?
কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ .
অর্থ মুবারক: “যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে দলিল পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ - ১১১)
কাজেই যারা হাত-পা, চেহারা খোলা রাখা জায়েয ফতোয়া দিচ্ছে, তারা মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার এবং  উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরই বিরোধীতা করছে। আর যারা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বিরোধীতা করবে তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, 
مَنْ يَعْصِ اللهَ وَ رَسُوْلَهُ وَ يَتَعدَّ حُدُوْدَةُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا وَ لَهُ عَذَابٌ مُهِيْنٌ .
অর্থ: যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানী করবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তাকে তিনি জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে এবং তার জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। (সূরা নিসা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৪)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, যারা এই ধরণের গোমরাহীমূলক ফতোয়া দিবে এবং যারা এ ফতোয়ার অনুসরণ করবে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশিত বিধান লঙ্ঘন করার কারণে চির জাহান্নামী হবে।
উল্লেখ্য যে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সম্পর্কে সার্বিক দিক থেকে সহীহ-সমঝ অর্থাৎ বিশেষ করে হাক্বীক্বী পর্দা পালনের ছহীহ বুঝ কখনোই লাভ করা সম্ভব নয় সইয়্যিদাতুনা মুতহ্হারাহ্, মুতহ্হিরাহ হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা ব্যতীত।

(মুহম্মাদিয়া জামিয়া শরীফ বালিকা মাদরাসা পক্ষ থেকে প্রকাশিত “নছীহতে উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম” এবং “কারামতে উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম” কিতাব মুবারকসমূহ সংগ্রহ করুন, পাঠ করুন।)

 “সম্মানিত নেক ছোহবত ইখতিয়ার এবং উনার তাছির বা ক্রিয়া”

সাইয়্যিদাতুন নিসা মুতহ্হারাহ্, মুতহ্হিরাহ্, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّـهُمْ بِالْغَدوةِ وَ الْعَشِىِّ يُرِيْضُوْنَ وَجْهَه .
অর্থ: তোমরা ঐ সমস্ত ব্যক্তি উনাদের ছোহবত মুবারকে লাযিম করে নাও, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করেন, উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে। (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলে যিকির তথা হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ারকে আবশ্যক করে দিয়েছেন। ছোহবত মুবারক উনার গুরুত্ব সম্পর্কে মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اَلصُّحْبَةُ مُتَاَثِّرَةٌ .
অর্থ: ছোহবত ক্রিয়াশীল বা তাছির করে। 
এই মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ থেকে বুঝা যাচ্ছে নেক ছোহবত ইখতিয়ার করলে নেক তাছির পড়ে। আর বদ ছোহবত ইখতিয়ার করলে বদ তাছির পড়ে।
নেক ছোহবত কেমন তাছির করে তা সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে আরো স্পষ্ট হয়ে যায়, হযরত হানযালা ইবনে উসাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদিন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, আপনি কেমন আছেন হে হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু? আমি বললাম, হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মুনাফিক হয়ে গিয়েছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ! আপনি এটা কি বললেন? আমি বললাম, যখন আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট অবস্থান করি এবং তিনি আমাদের কাছে জান্নাত-জাহান্নামের কথা আলোচনা করেন তখন মনে হয় আমরা সব দেখতে পাচ্ছি। আর যখন উনার ছোহবত মুবারক থেকে বের হয়ে আসি, আমরা আহলিয়া, আল-আওলাদ, ক্ষেত-খামার অর্থাৎ পরিবারের সাথে জড়িয়ে যাই। তখন আমরা অধিকাংশই ভুলে যাই সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে¡ আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমাদেরও এরূপ হয়। তারপর আমি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গেলাম এবং বললাম, ইয়া রসূল্লাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মুনাফিক হয়ে গিয়েছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এটা কেমন কথা? অতঃপর আমি বললাম, ইয়া রাসূল্লাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যখন আমরা আপনার কাছে থাকি আপনি জান্নাত-জাহান্নামের কথা আলোচনা করেন তখন মনে হয় আমরা সবকিছু দেখছি। আর যখন আপনার ছোহবত মুবারক থেকে বের হয়ে আসি, আমরা আহলিয়া, আল-আওলাদ, ক্ষেত-খামার অর্থাৎ পরিবারের সাথে জড়িয়ে যাই তখন আমরা অধিকাংশই ভুলে যাই। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ঐ মহান সত্তা উনার কসম! যাঁর কুদরতি হাত মুবারকে আমার সম্মানিত নূরুল আমর মুবারক (প্রান) মুবারক! যদি আপনারা সর্বদা আমার কাছে থাকতেন এবং যিকিরের মধ্যে থাকতেন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনাদের সাথে বিছানায় এবং রাস্তায় মুছাফাহ করতেন। কিন্তু হে হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এই সময় এই রকম হয়, ঐ সময় ঐ রকম হয় এভাবে তিনবার বললেন।  
সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুতহ্হারাহ্, মুতহ্হিরাহ্, হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার  নছিহত মুবারক থেকে আমরা যা বুঝতে পেরেছি, যতক্ষণ নেক ছোহবতে থাকা হয় ততক্ষণ নেক তাছির পড়ে, জান্নাত-জাহান্নামের কথা স্মরণ হয় এবং আমলও করা হয়। আর যখন নেক ছোহবত থেকে বের হয়ে যাওয়া হয় তখন নেক তাছিরও থাকেনা, আমলের প্রতি আগ্রহও থাকেনা। এই কারণেই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা তওবা শরীফ উনার ১১৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, 
كُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ 
অর্থ: তোমরা ছদিক্বীন উনাদের সঙ্গী হয়ে যাও।
এখানে বিষয়টি ফিকিরের যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি   كُوْنُوْا مَعَ الْقُرْانْবলতে পারতেন। কিন্তু তিনি كُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ বলেছেন। অর্থাৎ- ছদিক্বীন তথা হক্কানী- রব্বানী ওলীআল্লাহ, যারা দায়েমীভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল উনাদের সঙ্গী হতে বলেছেন। কেননা, আহলে যিকির তথা ওলীআল্লাহ উনাদের উপর দায়েমীভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক নাযিল হয়। 
একটি ঘটনার মাধ্যমে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। যেমন- একদিন এক  ব্যক্তি একজন ওলীআল্লাহ উনাকে সুওয়াল করলেন, “মানুষ বলে ওলীআল্লাহ উনার কবরের পাশে দাফন করতে। এটা কেন বলে? তখন ছিল গরমকাল, ওলীআল্লাহ উনাকে পিছন থেকে উনার খাদিম পাখা দিয়ে বাতাস করছিল। ওলীআল্লাহ সুওয়ালকারীকে কাছে ডাকলেন। সুওয়ালকারী উনার কাছে আসার পর তিনি তাকে বললেন, তোমার গায়ে কি বাতাস লাগছে? তখন লোকটি বলল, জ্বী। ওলীআল্লাহ পুনরায় বললেন, তোমাকে কি বাতাস করা হচ্ছে? সে বলল, না। তিনি বললেন, তাহলে কাকে বাতাস করা হচ্ছে? লোকটি বলল, আপনাকে। তিনি পুনরায় বললেন, আমাকে বাতাস করা হচ্ছে তাহলে তোমার গায়ে কেন বাতাস লাগছে? লোকটি উত্তর দিল, আপনার নিকটবর্তী হওয়ার কারণে। তখন ওলীআল্লাহ তিনি বললেন, মুহসিনীন তথা হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহ উনাদের উপর সবসময় মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক নাযিল হয়। আর যারা উনাদের নিকটে আসবে তারাও সেই রহমত মুবারক উনার হিসসা লাভ করবে।
যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ৫৬ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন,
اِنَّ رَحْمَةَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ .
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক মুহসিনীন তথা ওলীআল্লাহ উনাদের নিকট রয়েছে।
সুতরাং হক্বানী-রব্বানী ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করলে রহমত মুবারক লাভ করা যাবে। আর রহমত মুবারক লাভ করতে পারলে নেক কাজ করা সহজ-সম্ভব হবে, দ্বীনের ছহিহ সমঝ পয়দা হবে এবং হক্ব-নাহক্বের পার্থক্য করার যোগ্যতা হাছিল হবে।

“মহান আল্লাহ পাক তিনি যার অন্তরকে
প্রসারিত করেন তাকেই হিদায়েত দান করেন”

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার ৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
هُوَ الَّذِيْ أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ اٰيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيْلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيْلَهُ إِلَّا اللهُ ۗ وَالرَّاسِخُوْنَ فِي الْعِلْمِ يَقُوْلُوْنَ اٰمَنَّا بِهٖ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ
অর্থ মুবারক: মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, উনার মধ্য থেকে কিছু আয়াতে মুহকামাত (স্পষ্ট আয়াত শরীফ) এগুলো হল কিতাব উনার মূল, আর অন্যগুলো হল আয়াতে মুতাশাবিহাত (ব্যাখ্যা সাপেক্ষ বা রূপক আয়াত শরীফ)। আর যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারা ফিৎনা সৃষ্টি ও অপব্যাখ্যা করার উদ্দেশ্যে রূপক আয়াত শরীফ উনাদের অনুসরণ করে। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত উনাদের সঠিক ব্যাখ্যা কেউ জানে না। আর যারা গভীর ইলম উনার অধিকারী, অর্থাৎ খাছ ইলমে লাদুন্নি প্রাপ্ত উনারা বলেন, আমাদের রব উনাদের পক্ষ থেকে যেসব (কিতাব) নাযিল হয়েছে, সেসব বিষয়ের প্রতি আমরা ঈমান আনলাম, আর জ্ঞানীরা ব্যতীত কেউ  নছিহত গ্রহন করে না।
 এই মহাসম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ দুই ধরণের। ১. মুহকামাত-স্পষ্ট আয়াত শরীফ ২. মুতাশাবিহাত- রূপক তথা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ আয়াত শরীফ। অর্থাৎ মুহকাম  আয়াত শরীফ উনাদের অর্থ স্পষ্ট, সহজেই উপলব্ধি করা যায় এবং অর্থ নির্ধারণ ও গ্রহণে কোন অসুবিধা হয় না। আর মুতাশাবিহ আয়াত শরীফ উনাদের অর্থ রূপক, ব্যাখ্যা ব্যতীত হাক্বীক্বী মর্ম উপলব্ধি করা সম্ভব না। তবে যারা রছিখুন  তথা গভীর ইলম উনার অধিকারী উনারাই পারেন এই সমস্ত আয়াত শরীফ উনাদের মর্ম উদঘটন করতে। মুতাশাবিহ আয়াত শরীফ উনার উদাহরণ হল
مَنْ يَّهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِلَلَهُ وَلِيًّا مُرْشِدًا .
অর্থ মুবারক: মহান আল্লাহ পাক যাকে হিদায়েত দান করেন সে হিদায়েত লাভ করে। আর যাকে গোমরাহ করেন তার জন্য কোন ওলিয়ে মুর্শিদ থাকবে না/ পাবে না। 
এই মহাসম্মানিত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছিহত মুবারক থেকে আমরা যা বুঝতে পেরেছি যে, এই আয়াত শরীফ উনার অর্থ করতে গিয়ে যাদের কম আক্বল-সমঝ রয়েছে তারা বলে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে হিদায়েত করেন, সেই হিদায়েত লাভ করে। আর যাকে গোমরাহ করেন কেউ তাকে হিদায়েত দিতে পারে না। তাহলে কি মহান আল্লাহ পাক তিনি একজনের একরকম চান আর আরেকজনের আরেক রকম চান? নাউযুবিল্লাহ! মূলত, এরূপ ধারণা পোষণ করা মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারক উনার খিলাফ। মেছাল স্বরূপ বলা যায়, একজন পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকলে পিতা-মাতা সবার  সাথেই সমান ব্যবহার করেন। কিন্তু যে সন্তান পিতা-মাতার অনুগত, স্বাভাবিক ভাবেই পিতা-মাতা সেই সন্তানের প্রতি মায়া মুহব্বত বেশী থাকে। আর যে সন্তান তাদের অনুগত নয়, সে অনুগত না হওয়ার কারণে আদর মুহব্বত পায় না। অথচ পিতা-মাতা চায় সবাইকে সমান মুহব্বত করতে। অন্যদিকে যে সন্তান অনুগত নয় তাকেও যে মুহব্বত করা হয়না তা কিন্তু নয়। তদ্রুপ যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু হয়, সেই হিদায়েত পায়। আর যে উনার দিকে রুজু হয় না, ফরমাবরদারি করে না, গোমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে সে হিদায়েত লাভ করতে পারে না। এ সম্পর্কে পবিত্র  সূরা আনআম শরীফ উনার ১২৫ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
فَمَنْ يُرِدِ اللهُ اَنْ يَهْدِيَه يَشْرَحْ صَدْرَه الْاِسْلَامِ وَمَنْ يُرِدْ اَنْ يُضِلَّه يَجْعَلْ صَدْرَه ضَيِّقًا حَرَجًا .
অর্থ মুবারক: মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে হিদায়েত করতে চান, তার অন্তরকে ইসলাম উনার জন্য প্রসারিত করে দেন। আর যাকে গোমরাহ করতে চান অর্থাৎ যে গোমরাহীর মধ্যে দৃঢ় তার অন্তরকে সংকুচিত বা কঠিন করে দেন। 
আর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা যুমার শরীফ উনার ২২ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
اَفَمَنْ شَرَحَ اللهُ صَدْرَه لِلْاِسْلَامِ فَهُوَ عَلى نُوْرٍ مِنْ رَبِّه فَوَيْلٌ لِلْقَاسِيَةِ قُلُوْبُهُمْ مِنْ ذِكْرِ اللهِ اُولئِكَ فِىْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ .
অর্থ মুবারক: মহান আল্লাহ পাক তিনি যার অন্তরকে ইসলাম উনার জন্য প্রসারিত করেন, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নূরে নূরান্বিত হয়ে যান। যার অন্তর মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির না করার কারণে কঠিন হয়ে যায়, তার জন্য ধ্বংস, জাহান্নাম। তারাই প্রকাশ্য গোমরাহির মধ্যে রয়েছে।
উপরোক্ত মহাসম্মানিত আয়াত শরীফসমূহ উনাদের ব্যাখ্যায় সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুতহহারাহ, মুত্বহহিরাহ হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মহামূল্যবান নছীহত মুবারক থেকে আমরা যা বুঝতে পেরেছি- তাহলো যে বা যারা হেদায়েত চায় সে বা তারা হেদায়েত লাভ করে। আর যে বা যারা গুমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে সে বা তারা হেদায়েত লাভ করতে পারে না। আরো উল্লেখ্য হিদায়েত লাভ করার জন্য অন্যতম হচ্ছে অন্তর প্রসারিত হওয়া। যে ব্যক্তি হিদায়েত লাভ করে তার অন্তর নূরে নূরান্বিত হয়ে যায়, ইলমে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আর যে গোমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে তার অন্তরটা সংকুচিত হয়ে যায়।
উল্লেখ্য যে, কিভাবে হিদায়েত লাভ করা যাবে আর কি কারণে হিদায়েত থেকে মাহরূম হয়ে যাবে সে বিষয়ে আমাদেরকে হাক্বীক্বী ইলম দান করেছেন সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুতহহারাহ, মুত্বহহিরাহ হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি। সুতরাং উনার মহাসম্মানিত ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার ব্যতীত কারো পক্ষে এই হাক্বীক্বী ইলম মুবারক উনার মর্ম উপলব্ধি করা সম্ভব না। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত উনার মহাসম্মানিত ছোহবত মুবারকে এসে সেই মহা মূল্যবান নিয়ামত মুবারক হাছিল করা।

বাইয়াত কেন গ্রহণ করতে হয়?
সমাজে আমরা বিভিন্ন শ্রেণীর লোক দেখতে পাই। এর মাঝে এক শ্রেণীর লোক রয়েছে যারা কোন প্রশ্ন ছাড়াই যেকোন বিষয় গ্রহণ করে। আবার আরেক শ্রেণীর লোক রয়েছে যারা কোন কিছু গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যুক্তি তালাশ করে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, কিছু রোগী, যাদেরকে ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লিখে দিলে রোগী বিনা বাক্য ব্যয়ে সেই প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ খেতে থাকে। আবার কিছু রোগী রয়েছে, যারা ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেও কোন্ ঔষধ কোন্ কারণে খেতে হবে তা জিজ্ঞাসাবাদ করে। 
ঠিক তদ্রুপ সমাজে কিছু মানুষ রয়েছে, যদি তাদেরকে বলা হয়, বাইয়াত গ্রহণ করলে জান্নাত লাভ করা যাবে, তখন তারা জান্নাত লাভের আশায় বিনা চু-চেরায় বাইয়াত গ্রহণ করে।  আবার আরেক শ্রেণীর  লোক রয়েছে, যাদেরকে বাইয়াত গ্রহণ করতে বললে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন উত্থাপন করে। 
     উল্লেখ্য যে, কেন বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে সেই বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করার জন্য সম্মানিত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিকোন থেকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক থেকে যে বিষয়টি বুঝতে পেরেছি তা তুলে ধরা হলো: 
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوْا الصَّالِحاَتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا اَبَدًا 
অর্থ: যারা ঈমান এনেছেন এবং আমলে ছলেহ করেছেন উনাদেরকে অচিরেই এমন জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে যার নিচ দিয়ে নহর সমূহ প্রবাহিত হয়। উনারা সেখানে অনন্তকাল অবস্থান করবেন। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৫৭)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, ঈমান এনে আমলে ছলেহ করতে পারলেই জান্নাত লাভ করা সম্ভব।
আর আমলে ছলেহ উনার একটি অংশ হলো নামায। এই সম্মানিত নামায হলো ঈমানদার ও কাফিরের মাঝে পার্থক্যকারী। কেননা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কোথাও গেলে যখন আযান শুনতে পেতেন, তখন বুঝতে পারতেন এটা একটি মুসলিম এলাকা। আর যখন আযান শুনতে পেতেন না, তখন বুঝতে পারতেন সেটা অমুসলিম এলাকা। 
সেই মহাসম্মানিত নামায উনাকে কিভাবে আদায় করতে হবে সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
اَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِىْ .
অর্থ মুবারক: “আমার স্মরণে নামায আদায় কর।” (পবিত্র সূরা ত্বহা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফÑ১৪)
 এই আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক থেকে আমরা যা বুঝতে পেরেছি তা হলো- মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির বা স্মরণ ছাড়া নামায হলো প্রাণহীন। আর যে নামাযে প্রাণ নেই, সেই নামাযের কোন মূল্য নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ .
অর্থ মুবারক: “নিশ্চয়ই নামায মানুষকে অশ্লীল-ফাহেশা কাজ থেকে বিরত রাখে।” (পবিত্র সূরা আনকাবূত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৪৫)
মূলত, যেই নামাযে মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ আছে অর্থাৎ প্রাণ আছে, সেই নামাযই মানুষকে গুনাহ থেকে বাঁচায় তথা হিফাজত করে। আর যেই নামায মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ ব্যতীত আদায় করা হয় অর্থাৎ যে নামায প্রাণহীন তা মানুষকে গুনাহ থেকে বাঁচাতে পারে না। 
উল্লেখ্য যে, নামায আদায়রত অবস্থায় শয়তান মানুষকে মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ ভুলিয়ে দেয়। তাই শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই রুহানী কুওওয়াত অর্জন করা প্রয়োজন। আর সেই রুহানী কুওওয়াত অর্জন করার জন্যই রুহানী কুওওয়াতসম্পন্ন ওলীআল্লাহ উনাদের নিকট যেতে হবে। 
মূলত, আমাদেরকে কেন বাইয়াত হতে হবে, উপরোক্ত বিষয়টি দ্বারা স্পষ্ট। সুতরাং বিষয়টি ফিকির করে যারা নছীহত গ্রহণ করতে চায় তাদের জন্য উপরোক্ত আলোচনাটুকুই যথেষ্ট। আর যারা নছীহত গ্রহণ করবে না তথা যাদের হিদায়েত ভাগ্যে নেই তাদের জন্য সমস্ত কুরআন শরীফ, হাদিছ শরীফ উনার দলিল দিলেও তারা নছীহত গ্রহণ করবে না তথা বাইয়াত গ্রহন করার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবে না। 
সুতরাং, আমরা যারা বাইয়াত হতে চাই এবং অন্তর পরিশুদ্ধ করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনাদের রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে চাই, একমাত্র তাদের জন্যই বর্তমান যামানায় যিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহহির সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার আর মহিলাদের জন্য যিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,  মুত্বহ্হারাহ, মুত্বহহিরাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনাদের মুবারক ছোহবতে এসে বাইয়াত গ্রহণ করে অন্তর পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে আখিরাতের নিরাপত্তা ও কামিয়াবী হাছিল করা কর্তব্য।

“ইলমে তাসাউফ অর্জন করা
ব্যতীত ইবাদত মূল্যহীন”

সাইয়্যিদাতুন নিসা, মুত্বহহারাহ, মুত্বহহিরাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার  মহামূল্যবান নছীহত মুবারক থেকে আমরা যা বুঝতে পেরেছি তা তুলে ধরার কোশেশ করেছি, 
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ ۖ فَاحْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللَّـهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ ۚ لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا
অর্থ মুবারক: “তাদের কাছে যে কিতাব আছে তার সত্যায়ণকারী স্বরূপ আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি। অতঃপর আপনি তাদের মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব অনুসারে ফায়ছালা করুন। আপনার কাছে হক্ব আসার পর তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। অর্থাৎ আপনার উম্মত যেন তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ না করে। আমি তোমাদের প্রত্যেকের জন্য শরীয়ত ও ত্বরীকত দিয়েছি।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৪৮)
এই মহাসম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে দু’টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে: (১) শরীয়ত (২) ত্বরিক্বত। শরীয়ত হল- যাহিরী বিধান। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা জারিয়াত উনার ৫৬নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে  ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
অর্থ মুবারক: “আমি জ্বীন এবং ইনসানকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য।” 
আর এই ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য যেই খুলুছিয়াত বা হুজুরী প্রয়োজন সেই খুলুছিয়াত বা হুজুরী পয়দা করার ইলম হল- ইলমে তাসাউফ বা মা’রিফাত বা ত্বরিক্বত।
উল্লেখ্য, ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাসাউফ একটি অপরটির পরিপূরক। তাই কোন ব্যক্তি যদি শুধু ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করে কিন্তু ইলমে তাসাউফ অর্জন না করে তাহলে এটা তার জন্য হবে হিজাবে আকবর অর্থাৎ সবচেয়ে বড় পর্দা। আর যদি উভয়টি অর্জন করে তবে ইহা তার জন্য হবে হিদায়েতে আকবর। অর্থাৎ সবচেয়ে বড় হিদায়েত। তরীক্বত বা ইলমে তাসাউফ ছাড়া শুধুমাত্র শরীয়ত বা ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার মাধ্যমে কখনই পরিপূর্ণ ইলম বা হিদায়েত লাভ করা সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَأَن لَّوِ اسْتَقَامُوا عَلَى الطَّرِيقَةِ لَأَسْقَيْنَاهُم مَّاءً غَدَقًا
অর্থ মুবারক: “আর যদি তারা তরীক্বতের উপর ইস্তেকামত থাকত তাহলে আমি তাদেরকে প্রচুর পানি দ্বারা সিক্ত করতাম।” (পবিত্র সূরা জ্বীন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৬) 
অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহর পাশাপাশি তরীক্বত বা ইলমে তাসাউফ অর্জন করতে পারবে তাকে পর্যাপ্ত ইলম দানের মাধ্যমে সিক্ত করা হবে অর্থাৎ ইতমিনান করা হবে। (সুবহানা উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম) 
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ  وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ  ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّـهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّـهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ 
অর্থ মুবারক: “মহান আল্লাহ পাক তিনি উম্মিদের মাঝে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে শুনাবেন, তাযকিয়া করবেন, কিতাব এবং হিকমত শিক্ষা দিবেন যদিও ইতিপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে ছিল অর্থাৎ হিদায়েতের উপর ছিল না। উনাদের পরে আরো অনেকে আসবেন যারা এখনো উনাদের সাথে মিলিত হন নি। তিনিই পরাত্রুমশীল, প্রজ্ঞাময়।  এটা মহান আল্লাহ পাক উনার ফযল বা অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই দান করেন। মহান আল্লাহ পাক সবচেয়ে বড় অনুগ্রহশীল।” (পবিত্র সূরা জুমুয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ২,৩,৪)
  এই মহাসম্মানিত আয়াত শরীফ উনার থেকে যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি যুগে যুগে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যমীনের বুকে প্রেরণ করেছেন। যেন উনারা উনাদের উম্মতদেরকে কিতাব, হিক্বমত অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ এবং ইলমে তাসাউফ শিক্ষা দেন এবং তাদেরকে তাযকিয়া অর্থাৎ অন্তর পরিশুদ্ধ করেন। আর উনারাও সেই সম্মানিত কাজের যথাযথ আঞ্জাম দিয়েছেন। এবং উনাদের পরে উনাদের কায়িম-মাক্বাম হিসেবে যুগে যুগে নায়িবে রসূল, ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া উনারা এসেছেন, আসবেন। উনারাও অনুরূপ করেছেন, করবেন। কিয়ামত পর্যন্ত এ ধারা বলবৎ থাকবে। 
এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالىَ عَنْهُ  فِيْمَا اَعْلَمُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلىَّ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْعَثُ لِهَذِهِ  الْاُمَّةِ عَلى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِيْنَهَا .
অর্থ মুবারক: “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে এ উম্মতের জন্য  একজন মুজাদ্দিদ উনাকে পাঠিয়ে থাকেন। যিনি দ্বীন-ইসলাম উনার মধ্যে তাজদীদ করেন।” (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, প্রতি শতকের ন্যায় এই আখিরী যামানাও হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আখাছছুল খাছ নায়েব বা ওয়ারিস হিসেবে উম্মতের নাজাতের জন্য তাশরীফ মুবারক গ্রহন করেছেন ১৫ শতকের মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম এবং উনারই জাওযাতুম মুকাররমাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনারা। উনারা প্রতিনিয়ত এই মুসলিম উম্মাহকে মহাসম্মানিত কালামুল্লাহ শরীফ ও মহাসম্মানিত সুন্নাহ শরীফ শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। এবং অন্তরের পরিশুদ্ধতা দান করছেন। (সুবহানা উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম) প্রতিনিয়ত উনারা কিভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহাব্বত, মারিফত, নিসবত, কুরবত সন্তুষ্টি হাছিল করা যাবে সেই শিক্ষা মুবারক দিয়ে যাচ্ছেন।
কাজেই পুরুষ-মহিলা সকলের জন্য আবশ্যক হচ্ছে উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছোহবত মুবারক ইখতিয়ারের মাধ্যমে ইলমে ফিকাহ্ ও ইলমে তাছাউফ উভয় প্রকার ইলম অর্জন করে মু’মীনে কামিল হওয়া। 
 মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সকলকে সেই তৌফিক দান করেন। আমীন!

(মুহম্মাদিয়া জামিয়া শরীফ বালিকা মাদরাসা পক্ষ থেকে প্রকাশিত “নছীহতে উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম” এবং “কারামতে উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম” কিতাব মুবারকসমূহ সংগ্রহ করুন, পাঠ করুন।)

No comments:

Post a Comment

Featured post

নজিরবিহীন ঘোষণা মুবারক

কায়িনাতের সবকিছুই সাজাবো এবং সারা কায়িনাতের সবাইকে খাওয়াবো ____________________________________ মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত...